এটা একটি চিন্তার খোরাক। ধরে নেই, একদিন পৃথিবীর সব মানুষ উধাও হয়ে গেলো। মানুষবিহীন একটি পৃথিবী কেমন হবে তখন? ফুয়েল সরবরাহ বন্ধ থাকায় কয়েকদিনের মধ্যেই বৈদ্যুতিক স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এবং কেউই আর তা চালু করতে পারবে না।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মাটির নীচের রাস্তা, ট্যানেল ও পয়ঃনিষ্কাশন বা স্যানিটেশন ব্যবস্থা পানিতে ভরে যাবে। লন্ডনে প্রতিদিন ৪৭ মিলিয়ন লিটার পানি নিষ্কাশন করা হয়। হিটার এবং এয়ারকন্ডিশন না থাকায় ঘরের পাইপগুলো ফেটে যাবে। এমনকি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাছপালায় ছেয়ে যাবে বড় বড় বিল্ডিংগুলোও। কেউই সেগুলো কাটতে এগিয়ে আসবে না।

বরং এক শহর থেকে আরেক শহরের রাস্তা মুছে যাবে এবং পশু-পাখিরা শহরের দখল নিয়ে নেবে। ফসলি জমিগুলো জঙ্গল আর গাছে ভরে যাবে। লোহা, মেটাল এসব মরিচা ধরবে এবং প্লাস্টিক ও অন্যান্য জিনিসপত্রও ভেঙে সব আস্তে আস্তে মাটির সাথে মিশে যাবে। পাশাপাশি কোটি কোটি গাড়ির টায়ার মাটিতে পড়ে থাকবে।

পারমাণবিক চুল্লিগুলো ধ্বংস হয়ে যেতো, ছবি: সংগৃহীত
পারমাণবিক চুল্লিগুলো ধ্বংস হয়ে যেতো, ছবি: সংগৃহীত
সারাবিশ্বের পারমাণবিক চুল্লিগুলো হয় অকেজো হয়ে যেতো বা ধ্বংস হয়ে প্রকৃতিতে এর রেডিয়েশন ছড়িয়ে দিতো। এবং অনেক জীব-জন্তুর প্রাণহানির কারণ হতো।

পারমাণবিক চুল্লির রেডিয়েশনে বিভিন্ন প্রাণীর জিনগত মিউটেশন হয়ে নতুন বিবর্তনীয় ধারা তৈরি হতো। এক্স-ম্যান মুভিগুলো এর একটি উত্তম উদাহরণ- যেখানে দেখা যায় যে, পারমাণবিক রেডিয়েশনের ফলে মানুষের ভেতর থেকেই মিউট্যান্টদের মতো সুপার হিউম্যানরা জন্মগ্রহণ করেন। ফলে তারা অনেক অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী হন।

এরমধ্যেই রাস্তাগুলোর পাথর ফেটে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস বের হয়ে যেতো। মশারাও ভালো সময় পেতো। যদিও তাদের প্রধান শত্রু মানুষকে তারা হারিয়ে ফেলেছে। তবে তারা অন্য প্রাণীদের ওপর চড়াও হতো এবং গাছপালা বিস্তারে ভূমিকা রাখতো। কেননা মশা রক্তের মতই বিভিন্ন গাছের রস সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেন। বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলোও নিজেদের দ্বিগুণহারে বংশ বিস্তার করতে পারতো।

বাঘ, সিংহ ও হাতিরা সুয়েজ ক্যানেল দিয়ে সাঁতরে ইউরোপে পৌঁছে যেতো। সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত প্লাস্টিক আস্তে আস্তে ব্যাক্টেরিয়ায় নষ্ট হয়ে যেতো। তবে তা ঘটতে কয়েক মিলিয়ন বছর লেগে যেতো। বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং সমুদ্রের উচ্চতা কমে যেতো এবং পৃথিবীর জলবায়ুতে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও হ্রাস পেতো। রাসায়নিক দ্রব্যগুলো মাটিতে মিশে যাওয়ায় নদীর পানিও পরিষ্কার হয়ে যেতো।

জীব-জন্তু, গাছপালায় পুরো পৃথিবী ভরে যেতো। দেখতে মনে হতো, এটা নতুন একটি বাগান হয়তো! আমাদের ছাড়াও পৃথিবী টিকে থাকতে পারবে। তবে পৃথিবী কি আমাদের ভুলতে পারবে? না, আমরা এই পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এনেছি। আমাদের পদচিহ্ন থেকেই যাবে এই গ্রহে।

 

কলমকথা/ বিথী